১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বক্তব্য: (৪ টি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য)
১৬ ডিসেম্বর—বাঙালি জাতির অহংকার, আনন্দ আর বেদনার এক মহাকাব্যিক দিন। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, ৩০ লক্ষ শহীদের তাজা রক্ত আর ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই লাল-সবুজের পতাকা। স্কুল, কলেজ, অফিস কিংবা রাজনৈতিক মঞ্চ—বিজয় দিবসের বক্তব্য সব সময় হওয়া চাই ওজস্বী এবং হৃদয়স্পর্শী।
আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বসাধারণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আদর্শ ও চেতনাকে কেন্দ্র করে সাজানো হলো বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের এই আয়োজন।
মহান বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য (সর্ব সাধারণের জন্য)
সম্মানিত উপস্থিতি এবং আমার দেশের দেশপ্রেমিক ভাই ও বোনেরা,
সবাইকে বিজয় দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা।
আজ ১৬ই ডিসেম্বর। আমাদের বুক ফুলিয়ে বাঁচার দিন, মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দিন।। আজ আমি এখানে কোনো বড় নেতার গুণগান গাইতে আসিনি, আমি এসেছি একজন সাধারণ বাংলাদেশি হিসেবে আমার হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে।
১৯৭১ সালে যারা নিজেদের বর্তমানকে বিসর্জন দিয়েছিলেন আমাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য, সেই সকল নাম-না-জানা শহীদ এবং অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জানাই আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁরা কোনো দলের জন্য যুদ্ধ করেননি, তাঁরা যুদ্ধ করেছিলেন এই মাটির জন্য, আমাদের পতাকার জন্য এবং একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আজ আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করার সময় এসেছে—আমরা কি সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পেরেছি? মনে রাখবেন, শুধু বছরে একদিন পতাকায় ফুল দেওয়াই দেশপ্রেম নয়। আপনি যখন আপনার কাজটা সততার সাথে করেন, যখন অন্যায় দেখে প্রতিবাদ করেন এবং যখন দেশের সম্পদ নিজের মনে করে রক্ষা করেন—সেটাই হলো আসল মুক্তিযুদ্ধ।
আসুন, আজ শপথ নিই—আমরা বিভাজন ভুলে, হিংসা ভুলে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াব। শহীদের রক্ত তখনই সার্থক হবে, যখন আমরা এই দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং নিরাপদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
সবাই ভালো থাকবেন। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
বিজয় দিবসের বক্তব্য (BNP-এর জন্য বিশেষায়িত)
আসসালামু আলাইকুম।
সম্মানিত সভাপতি, মঞ্চে উপবিষ্ট জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ এবং আমার সামনে উপস্থিত জাতীয়তাবাদী শক্তির অকুতোভয় সৈনিক ভাই ও বোনেরা,
আজ ১৬ই ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন। আজকের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদ এবং ২ লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগ, যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন মানচিত্র, একটি লাল-সবুজ পতাকা।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, ১৯৭১ সালে যখন জাতি দিশেহারা, ঠিক সেই ক্রান্তিলগ্নে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে এসেছিল একটি বজ্রকঠিন স্বর— “আমি মেজর জিয়া বলছি…”। সেইদিন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা কেবল একটি ঘোষণা ছিল না, সেটি ছিল ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তোলার এক জাদুর কাঠি। তাঁর সেই আহ্বানেই আপামর জনতা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রণাঙ্গনে। তাই আজকের এই বিজয় দিবসে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই— স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া এবং বাংলাদেশের বিজয় একই সূত্রে গাঁথা। জিয়াকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করা অসম্ভব।
সংগ্রামী সাথীরা, আমরা যুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য, সাম্যের জন্য এবং মানবিক মর্যাদার জন্য। কিন্তু আজ প্রশ্ন জাগে মনে— সেই গণতন্ত্র কি আজ সুরক্ষিত? আজ যখন আমরা বিজয়ের গান গাই, তখন আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কারণ, যার হাত ধরে এই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’, আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ সময় মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, তাকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
বিজয় দিবসের এই দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে— যে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে শহীদ জিয়া এই দল গঠন করেছিলেন, সেই ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’কে বুকে ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের ধমনীতে শহীদ জিয়ার রক্ত, আমাদের চেতনায় দেশনেত্রীর ত্যাগ।
বন্ধুগণ, আজকের এই বিজয়ের দিনে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকুক আগামীর দিকে। দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি সুদূর প্রবাসে থেকেও আমাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার। কোনো অপশক্তিই জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
আসুন, আজকের এই পবিত্র দিনে আমরা নতুন করে শপথ নেই— যতদিন না এদেশে পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র ফিরে আসে, ততদিন আমরা রাজপথ ছাড়ব না। শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেব না। ইনশাআল্লাহ, ধানের শীষের বিজয়ের মাধ্যমেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
সবাইকে আবারও বিজয় দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা।
শহীদ জিয়া— অমর হোক। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল— জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ— জিন্দাবাদ।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন কিছু পোস্ট
- লাল সবুজ নিয়ে স্ট্যাটাস
- জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ক্যাপশন
- জয় বাংলা নিয়ে ক্যাপশন
- রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে স্ট্যাটাস
- রাজনৈতিক বড় ভাই নিয়ে ক্যাপশন
মহান বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য (আওয়ামী লীগ-এর জন্য)
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।
শ্রদ্ধেয় সভাপতি, সম্মানিত প্রধান অতিথি এবং আমার সামনে উপবিষ্ট প্রিয় দেশপ্রেমিক ভাই ও বোনেরা—সবাইকে জানাই মহান বিজয় দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আজ ১৬ই ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির জীবনে আনন্দ, গৌরব এবং অহংকারের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজকের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার অকুতোভয় নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি এই স্বাধীনতা। একই সাথে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই সেই সব বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি, যারা নিজেদের জীবন ও সম্ভ্রম বিলিয়ে দিয়ে আমাদের উপহার দিয়েছেন লাল-সবুজের এই পতাকা।
প্রিয় সুধী, বিজয় অর্জন করা কঠিন, কিন্তু তা রক্ষা করা আরও কঠিন। আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের একটি স্বাধীন ভূখণ্ড দিয়ে গেছেন, এখন এই দেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনার, আমার—আমাদের সকলের। আজকের এই দিনে আসুন আমরা শপথ নিই—সকল ভেদাভেদ ভুলে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে দেশকে বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাব।
সবাইকে আবারও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বক্তব্য (জামায়াতে ইসলামী-এর জন্য)
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম, আম্মাবাদ।
মাননীয় সভাপতি, উপস্থিত দায়িত্বশীল বৃন্দ এবং আমার প্রাণপ্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা—আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আজ মহান ১৬ই ডিসেম্বর। মহান আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি ১৯৭১ সালের এই দিনে আমাদের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ভূখণ্ড দান করেছেন। আজকের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সেই সকল বীর সন্তানদের, যারা দেশের জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। মহান রবের কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের জাতীয় বীরদের শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন এবং তাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতবাসী করেন।
প্রিয় সাথী ও বন্ধুরা, আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেলেও, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য—অর্থাৎ একটি ইনসাফপূর্ণ, শোষণমুক্ত ও নৈতিকতা সম্পন্ন সমাজ—আজও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যেখানে আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন কায়েম থাকবে। তাই আজকের দিনে আমাদের শপথ হোক—স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা সর্বদা সজাগ থাকব এবং সকল প্রকার আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে হেফাজত করুন এবং আমাদের সবাইকে দেশ গড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জিন্দাবাদ।






